শব্দদূষণ মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, নির্মাণকাজও শব্দদূষণের জন্য দায়ী। ম্যাস পিপলকে (গণমানুষ) সচেতন করে এবং সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বিত কাজের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।
শনিবার (১১ জুন) জাগো নিউজের কনফারেন্স রুমে ‘শব্দদূষণের বিরূপ প্রভাব ও প্রতিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক। ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদের সঞ্চালনায় বিশেষজ্ঞরা শব্দদূষণের বিভিন্ন দিক ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, শব্দদূষণ যে শুধু আমাদের শ্রবণে প্রভাব ফেলে তা নয়, মানসিক অবস্থার ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। শব্দদূষণের ফলে মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়। এর প্রভাব পড়ে তার সার্বিক কাজের ওপর। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর তো বটেই, শব্দদূষণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এসময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, নিঃসন্দেহে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা শব্দদূষণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উন্নত দেশগুলোতে যারা গণপরিবহন চালান তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। আমাদের দেশে যারা গণপরিবহন বা সেমি হায়ার লেভেলে গাড়ি চালান তারা একেবারেই কম শিক্ষিত বা অক্ষরজ্ঞানশূন্য। এজন্য তাদের জাজমেন্ট, অ্যাডুকেশন ও সেন্সিবিলিটি লেভেল সম্পর্কে ভেবে দেখা দরকার।
তিনি বলেন, রাজধানীতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো শুধু সিটি করপোরেশন দেখে। শব্দদূষণ কমাতে ঢাকা শহরে ইউলুপ ও যানচলাচলের জন্য স্পেস বাড়াতে হবে।
একইসঙ্গে রাজধানীতে যথাস্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও সার্বিক বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে পরামর্শের আহ্বান জানান তিনি।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শব্দদূষণ নীরব ঘাতক। আমাদের শহরে নীরব ঘাতকের সরব উপস্থিতি রয়েছে। শব্দদূষণ সবচেয়ে বেশি হয় যানবাহন থেকে। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নির্মাণকাজ। ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ এলাকার মধ্যে আছে জিরোপয়েন্ট ও পল্টন এলাকা। এছাড়া গুলশান-২ এ দূষণের মাত্রা বেশি।
‘একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবনের যে দূরত্ব থাকা দরকার ছিল গুলশানে সে দূরত্ব রাখা হয়নি। এছাড়া ইট ও কংক্রিটের পাশাপাশি গ্লাস ব্যবহার করার কারণে এসব জায়গায় অনেক বেশি ইকো (প্রতিধ্বনি) হয়। এছাড়া উচ্চবিত্তের এলাকা হওয়ার কারণে তারা অল্প যানজটেই অস্থির হয়ে পড়েন এবং হর্ন বাজান। এসব কারণে সেখানে শব্দদূষণ বেশি হচ্ছে। সম্মিলিতভাবে পজিটিভ মেন্টালিটি নিয়ে এগিয়ে এলে শব্দদূষণ কমে যাবে।’