অর্থনীতি ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
অর্থনীতি ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কয়েকজন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে সীমাবদ্ধ দায়ের ভিত্তিতে যে কারবার প্রতিষ্ঠান গঠন করেন তাকে যৌথমূলধনি কারবার বলে। সংক্ষেপে একে কোম্পানিও বলা হয়।
যৌথমূলধনি কারবারের মূলধন বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে বিভক্ত থাকে। এর প্রত্যেকটি একককে ‘শেয়ার’ বলে। যারা এ শেয়ার ক্রয় করে তাদেরকে ‘শেয়ারহোল্ডার’ বলা হয় এবং তারাই কোম্পানির মালিক বা সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন। দেশের কোম্পানি আইন অনুযায়ী এ কারবারকে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হয়।
অর্থনীতি ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
জসীম মিয়া তার একক নেতৃত্বে ও ব্যবস্থাপনায় ৫০,০০০ টাকা মূলধন নিয়োগ করে একটি হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই জসীম মিয়ার খামারটি বড় খামারে পরিণত হয়। অন্যদিকে, জসীম মিয়ার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করে।
ক. সংগঠন কাকে বলে?
খ. দারিদ্র্যের হার কমাতে NGO কীভাবে ভূমিকা রাখছে? সংক্ষেপে লিখ।
গ. উদ্দীপক অনুযায়ী, জসীম মিয়ার খামারের প্রকৃতি নির্ণয় কর এবং উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করো।
ঘ. উদ্দীপক অনুযায়ী, জসীম মিয়ার বন্ধুদের প্রতিষ্ঠিত খামারের সফলতা কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে? যথাযথ যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
০১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনের কাজকে সংগঠন বলে।
খ। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির দ্বারা NGO দারিদ্র্যের হার কমাতে ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন NGO কৃষি, কুটির শিল্প, ঋণদান ও সঞ্চয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, স্যানিটেশন ইত্যাদিসহ নানাবিধ সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে NGO নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। এর ফলে দেশে দরিদ্র লোকদের ভাগ্য উন্নয়ন হচ্ছে। অর্থাৎ দরিদ্র লোকদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশে দারিদ্র্যের হার দিন দিন কমছে। যেমন- ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ৮০% লোক দারিদ্রদ্র্যসীমার নিচে বাস করলেও বর্তমানে তা ২৪.৫%।
গ। উদ্দীপক অনুযায়ী, জসীম মিয়ার খামারটি হলো একমালিকানা কারবার। নিচে এর বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হলো। সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির একক মালিকানায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা কারবার বলে। অর্থাৎ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশে যখন কোনো ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে মূলধন জোগাড় করে কোনো ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে এবং উক্ত ব্যবসায়ে অর্জিত লাভ বা ক্ষতি একাই ভোগ করে তখন তাকে একমালিকানা কারবার বলে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, জসীম মিয়া তার একক নেতৃত্বে ও ব্যবস্থাপনায় ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করে একটি হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করেন। তাই তার খামারটি হলো একমালিকানা কারবার। এ ধরনের কারবারে মালিক একাই, ব্যবসার সকল সিদ্ধান্ত নেয় এবং ব্যবসায়ের দায়িত্ব হস্তান্তর করা যায় না। তবে একমালিকানা কারবারের স্থায়িত্ব মালিকের ইচ্ছা ও ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।
ঘ। উদ্দীপক অনুযায়ী, জসীম মিয়ার বন্ধুদের প্রতিষ্ঠিত খামারটি হলো অংশীদারি কারবার। এ ধরনের কারবারের সাফল্য নির্ভর করে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর। একের অধিক ব্যক্তি দ্বারা গঠিত কারবারকে অংশীদারি কারবার বলে।
সাধারণত অংশীদারি কারবারে সর্বনিম্ন ২ জন, সর্বোচ্চ ২০ জন এবং ব্যাংকিং অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য থাকতে পারে। এ ধরনের কারবারের মূলনীতি হলো পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। কারণ এই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের কল্যাণে যেমন ব্যবসাটি সাফল্যের
মুখ দেখতে পারে তেমনি এর অভাবে কারবারটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উদ্দীপকে দেখা যায়, জসীম মিয়ার সাফল্য দেখে তার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাৎ বন্ধুদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তারা একটি অংশীদারি কারবার শুরু করে। এ ধরনের কারবারে একমালিকানার চেয়ে ঝুঁকি কম। আবার, অংশীদারদের মধ্যে কেউ অদক্ষ হলে সবাইকে সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। ফলে অংশীদারদের দক্ষতাও এ ধরনের কারবারের সাফল্যকে প্রভাবিত করে।
তাছাড়া পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এতে কারবারের সাফল্য নিশ্চিত হয়। কাজেই বলা যায়, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস, শ্রম বিভাজন, দক্ষতা অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ এবং মতবিরোধ দেখা দিলে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান প্রভৃতি বিষয়ের ওপর অংশীদারি কারবারের সাফল্য নির্ভর করে।
রাকিব তার বাবার পেনশনের টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করে। প্রথম পর্যায় ব্যবসা খুব ভালো চললেও পরবর্তীতে পুঁজির সংকট, অসীম দায়বদ্ধতার কারণে কারবার বন্ধ করতে বাধ্য হয়। অপর দিকে, তারই বন্ধু রতন আরও ৪ জন বন্ধুকে নিয়ে যে কারবার গড়ে তোলে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিরও স্থায়িত্ব কম আর মতবিরোধ থাকায় কারবার পরিচালনায় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
ক. স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কী?
খ. সংগঠককে শিল্পাধিনায়ক বলা হয় কেন?
গ. রাকিবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাকিব ও তার বন্ধুদের গড়ে তোলা কারবার অপেক্ষা কেন যৌথ মূলধনী কারবার অধিক উত্তম? যুক্তি দাও।
০২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি নীতি ও আদর্শের আওতায় একটি স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বলে।
খ। উৎপাদন কাজে যে ব্যক্তি সংগঠনের কাজ করেন তাকে সংগঠক বলা হয়। কোনো কিছু উৎপাদনের উদ্দেশ্যে তিনি উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ একত্রিত করেন। তারপর এগুলোর মধ্যে সমন্বয়সাধন করে যাবতীয় ঝুঁকি বহনসহ উৎপাদন কাজ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন। কারবার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে উৎপাদিত দ্রব্য বাজারজাত করা পর্যন্ত সকল কাজের দায়িত্ব ও ঝুঁকি সংগঠকই বহন করেন। এজন্য তাকে শিল্পের চালক (Captain of the Industry) বলা হয়।
গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত রাকিবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি হলো একটি একমালিকানা কারবার। সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির মালিকানায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা কারবার বলে। এ ধরনের কারবারে কোনো একজন ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে মূলধন করে মুনাফার উদ্দেশ্যে উৎপাদন বা ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা করে।
তাছাড়া একমালিকানা কারবার গঠনের জন্য কোনো আইনি জটিলতায় পড়তে হয় না বলে তা গঠন দ্রুত ও সহজ হয়। এ কারবারে একজন মাত্র মালিক থাকে। এজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত হয়। তবে মূলধনের স্বল্পতার কারণে উৎপাদন কম হয়।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, রাকিব তার বাবার পেনশনের ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে এককভাবে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং পরিচালনা করে। তার এই প্রতিষ্ঠানটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত হলে স্বল্প পুঁজি ও অসীম দায়িত্বের কারণে রাকিব বর্তমানে কারবারটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
ঘ। উদ্দীপকে উল্লিখিত রাকিব ও তার বন্ধুদের গড়ে তোলা তথা একমালিকানা ও অংশীদার কারবার অপেক্ষা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে যৌথমূলধনী কারবার অধিক উত্তম। এক মালিকানা কারবারে মূলধন স্বল্পতার কারণে উৎপাদনশীলতা কম। আর অংশীদারি কারবারে এক মালিকানার চেয়ে বেশি মূলধন গঠিত হলেও তা যৌথ মূলধনী কারবার অপেক্ষা কম হয়। এর ফলে অন্যান্য কারবার অপেক্ষা যৌথ মূলধনী কারবারে অধিক উৎপাদন হয় এবং জাতীয় বৃদ্ধিতে অধিক অবদান রাখে।
এছাড়া এ কারবারের শেয়ারগুলো কম মূল্যের হওয়ায় সমাজের বিত্তশালী লোকদের সাথে নিম্ন আয়ের লোকেরাও তাদের স্বল্প সঞ্চয় শেয়ার ও বন্ড ক্রয়ে ব্যয় করতে পারে। এভাবে ক্ষুদ্র সন্যয়কারী শেয়ার ও বন্ডে লভ্যাংশ পেয়ে তাদের আয় বৃদ্ধি করতে পারে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, রাকিব নিজ দায়িত্বে স্বল্প পুঁজিতে (৫ লক্ষ) একটি একমালিকানা কারবার গড়ে তোলেও কিছু দিন পর তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, রাকিবের বন্ধু রতন ও ৪ জন অংশীদার নিয়ে গড়ে তোলে অংশীদার কারবার। কিন্তু মতবিরোধ থাকায় তাও বন্ধ হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে, যৌথ মূলধনী কারবারে এ ধরনের কোনো সমস্যা দেখা যায় না এবং এর স্থায়িত্বও অনেক বেশি। আবার, এ কারবার বৃহদাকার ও পুঁজিবহুল হয় বলে এতে ব্যয়বহুল আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হয়। পণ্যের মানোন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনে সহায়ক এবং এ কারবারে মূলধন বেশি হয় বলে এখানে বেশি বেতনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী ও ব্যবস্থাপক নিয়োগের অধিক উৎপাদন সম্ভব হয়। যৌথ মূলধনী কারবার বিভিন্নভাবে অধিক কর্মসংস্থানেও সাহায্য করে।
কারবার বৃহদায়তনের হওয়ায় এখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়। তাছাড়া এখানে শ্রমবিভাগ প্রবর্তন করা যায় বলে বিভিন্ন পদে বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ লোকের নিয়োগ নেওয়া সম্ভব হয়। ফলে অনেক বেকার কাজের সুযোগ পায়। তাই বলা যায়, একমালিকানা ও অংশীদার কারবার অপেক্ষা যৌথ মূলধনী কারবার অধিক উত্তম।
মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত অসহায় ও দূর্গত মানুষদের সাহায্যের জন্য ত্রাণ বিতরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসকরণ, শিক্ষা ও পুষ্টি উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ উন্নয়নে NGO ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা বিদেশি NGO যেমন- কারিতাস ইত্যাদি এবং বিদেশি দাতা সংস্থা WB, DE, USAID, JICA, ADB কাজ করে থাকে।
ক. সংগঠন কাকে বলে?
খ. যৌথমূলধনী কারবার দীর্ঘস্থায়ী হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন ধরনের সংস্থাসমূহের শ্রেণিবিন্যাস কর।
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উদ্দীপকে উল্লিখিত দেশীয় সংস্থাসমূষের ভূমিকা আলোচনা কর।
০৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনের কালকে সংগঠন বলে। যৌথ মূলধনী কারবার আইনের বিধিবিধান দ্বারা গঠিত হয় বলে
খ। দীর্ঘস্থায়ী হয়। যৌথ মূলধনী কারবারকে এক অর্থে দীর্ঘস্থায়ী বলা যায়। কারণ একমালিকানা বা অংশীদারি কারবারে কারো মৃত্যু হলে বা পাগল হয়ে গেলে যেরূপ ব্যবসায় অচল হয়ে পড়ে, যৌথ মূলধনী কারবারে এরূপ কোনো ক্ষতি হয় না। এখানে পুরাতন অংশীদারগণ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে যেমন কারবার ত্যাগ করতে পারে, তেমনি নতুন অংশীদার কারবারে যোগদান করতে পারে। এরূপ ব্যবস্থাপনার কারণে যৌথ মূলধনী কারবার দীর্ঘস্থায়ী হয়।
গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশে কর্মরত সংস্থাগুলোকে জাতীয় বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। নিচে এদের শ্রেণিবিন্যাস করা হলো-
জাতীয় বেসরকারি সংস্থা (National NGO); গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে দেশীয় বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (INGO): এসব বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কর্মরত। বিদেশি অর্থ ও কারিগরি সহায়তায় এবং ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সংস্থাগুলো এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত;
যেমন- কারিতাস, কেয়ার বাংলাদেশ, এসওএস, সেভ দা চিলড্রেন, কনসার্ন, ওয়ান্ড ভিশন, টেরেডস হোমস ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা (International Associate NGO): জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচালিত বেসরকারি সংস্থানসমূহের আর্থিক, কারিগরি ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদানকারী সংস্থানসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এদের কাজ হলো উল্লিখিত সংস্থার অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা।
বিশ্ব ব্যাংক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাইকা, এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়া ফাউন্ডেশন, ইউএসএইড, অক্সফাম, ইউকেএইড প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এদের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ইউনিসেফ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ঘ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উদ্দীপকে উল্লিখিত দেশীয় সংস্থা অর্থাৎ ব্র্যাক, আশা ও প্রশিকার ভূমিকা আলোচনা করা হলো-
ব্র্যাক: বর্তমানে বাংলাদেশর প্রায় সব জেলাতেই ব্র্যাকের কার্যক্রম বিস্তৃত রয়েছে। ব্র্যাকের কার্যক্রমগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি: গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচিতে কিছুসংখ্যক কেন্দ্রের সুগঠিত দলের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা দল উভয়ই রয়েছে। গ্রুপ গঠনের প্রক্রিয়া অন্যান্য সংস্থাগুলোর মতোই হয়ে থাকে। আর এই গ্রুপের মাধ্যমেই তাদের ঋণ দেওয়া হয়। গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিপুরক প্রকল্প হচ্ছে আড়ং। গ্রামীণ মহিলাদের তৈরি কাপড় কিনে আড়ং-এর মাধ্যমে শহরে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
শিক্ষা কর্মসূচি: ব্র্যাকের শিক্ষা- পদ্ধতি উদ্ভাবনীমূলক ও কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। এ কার্যক্রম দেশব্যাপী অল্প সময়ে শিক্ষা বিস্তার লাভে সাহায্য করেছে। শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ব্র্যাক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেসব বিদ্যালয়ে কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে থাকে। সম্প্রতি ঢাকায় ব্র্যাকের পরিচালনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য কর্মসূচি: ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির অধীনে খাবার স্যালাইন, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আশা: আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১৯৭৮ সালে আশা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং ১৯৯২ সালে স্পেশালাইজড ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ NGO কার্যক্রম শুরু করে। এটি বর্তমানে সর্ববৃহৎ আত্মনির্ভর, দ্রুত বিকাশমান ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর ইনোভেটিভ স্বল্প ব্যয় ও টেকসই ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৪ লক্ষ জন উপকারভোগীর মধ্যে প্রায় ২০,৯০৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের শুরু থেকে অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভূত ঋণ বিতরণ দাঁড়িয়েছে ১,২৭,৩৫৭.৩৯ কোটি টাকা এবং আদায় ১,১১,১৮৯.৮০ কোটি টাকা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ পৃষ্ঠা ১৯৬)।
প্রশিকা: ১৯৭৫ সলে ঢাকা জেলার’ মানিকগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে প্রশিকার কার্যক্রম সূচিত হয়েছিল। পরে ১৯৭৬ সালে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর পরিসরে কাজ শুরু করে। বর্তমানে প্রশিকা দেশের ৫৯টি জেলার ২৪,২১৩-টি গ্রাম ও ২,১১০-টি বস্তিতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন খাতে জুন ২০১৫ পর্যন্ত ৫,৪০৫.৫৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং ৫.৯৩৬.৩৩ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন সবাই ধন্যবাদ।