ই-কর্মার্স ব্যবসায়ীকে পণ্য উন্নয়ন ও বিপণনের কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়

ই-কর্মার্স ব্যবসায়ীকে পণ্য উন্নয়ন ও বিপণনের কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়: মানুষের প্রয়োজন, অভাব অথবা সন্তুষ্টি বিধানে সক্ষম এমন বস্তু পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু ভোগ বা ব্যবহার করে তার সবই পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্য কথায়, পণ্য হলো এমন দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান সকল বস্তু, যা মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারে, যার মধ্যে কিছু উপযোগ বিদ্যমান আছে।

একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ীকে পণ্য উন্নয়ন ও বিপণনের কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য একক পণ্য ও সেবা সংগ্রহ করার নিমিত্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

ই-কর্মার্স ব্যবসায়ীকে পণ্য উন্নয়ন ও বিপণনের কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়

১। পণ্যের মানস্তর: ই-কমার্স ব্যবসায়ীকে পণ্যের মানস্তর প্রথমেই ঠিক করতে হবে। সর্বোচ্চ মানের পণ্য সব প্রতিষ্ঠান তৈরি করবে এমনটি নাও হতে পারে। কেননা, সর্বোচ্চ মানের পণ্য খুব কম ক্রেতাই চায় বা তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে না। তাই প্রতিষ্ঠানকে অভীষ্ট ক্রেতাদের প্রয়োজন মিটানো এবং প্রতিযোগী পণ্যের মানস্তরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এমন একটি মানস্তর নির্ধারণ করতে হবে।

২। পণ্যমানের ধারাবাহিকতা: পণ্যমানের আরেকটি দিক হচ্ছে মানের ধারাবাহিকতা। ই-কমার্স ব্যবসায়ীকে খেয়াল রাখতে হবে যেন পণ্যটি ত্রুটিমুক্ত এবং নির্দিষ্ট মানস্তর সম্পন্ন হয়। ভোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সব প্রতিষ্ঠানের উচ্চস্তরের উপযোগী মান ধরে রাখার চেষ্টা করার প্রয়োজন হয়।

৩। পণ্যের বৈশিষ্ট্য: পণ্যের যে গুণাগুণ একে স্বতন্ত্র করে এবং ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করে, তাকে পণ্যের বৈশিষ্ট্য বলে। এক্ষেত্রে পণ্যের ডিজাইন, স্থায়িত্ব, পরিবেশ উপযোগিতা, সহজ ব্যবহার, বাড়তি সুবিধা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত নতুন ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্য সংযোজনের মাধ্যমে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে পারে।

৪। পণ্যের স্টাইল ও ডিজাইন: ভোক্তার সন্তুষ্টি বাড়ানো ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের আরেকটি উপায় হচ্ছে পণ্যের স্টাইল ও ডিজাইন প্রবর্তন করা। স্টাইল অপেক্ষা ডিজাইন ব্যাপক অর্থ বহন করে। পণ্যের বাহ্যিক রূপকে স্টাইল বলে। যদিও ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য স্টাইল কার্যকরী। কিন্তু স্টাইল দিয়ে ভোক্তা পণ্য থেকে কোনোপ্রকার বাড়তি সুবিধা পায় না। অন্যদিকে পণ্য ডিজাইন পণ্যের ভিতরের বিষয়। যথার্থ ডিজাইন হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পণ্য সাশ্রয়ীভাবে বিক্রি করা সম্ভব হয়।

৫। ব্র্যান্ডিং: ব্র্যান্ডিং হলো পণ্য কৌশলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি পণ্যকে চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি পণ্যকে অন্য কোনো পণ্য থেকে আলাদা করার জন্য সংকেত, চিহ্ন, নাম, প্রতীক, ডিজাইন বা অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করার সাথে সম্পৃক্ত সকল কার্যক্রমকে ব্র্যান্ডিং বলে। পণ্য কৌশলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্র্যান্ডিং।

কাজেই অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরা পণ্য উৎপাদন করলেও ব্র্যান্ডিং-এর দায়িত্ব অন্য প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়াকে সহজ ও সাশ্রয়ী মনে করে। ব্র্যান্ডিং হচ্ছে পণ্যকে আলাদা করার জন্য নাম, টার্ম, প্রতীক, নকশা, প্রসার ঘটানো বা এসবের সংমিশ্রণের কার্যক্রম, যা প্রতিযোগী পণ্য থেকে আলাদা করে। ব্র্যান্ডিং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দক্ষ ও সৃজনশীল কাজ। ব্র্যান্ডিং পণ্যের ভ্যালু বাড়ায় এবং স্বাতন্ত্র্যতা চিহ্নিত করে। ফলে অনুগত ক্রেতা সৃষ্টি হয়।

৬। মোড়কীকরণ: কোনো কোনো পণ্য এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, এর ওপরে আলাদা বাহ্যিক আবরণ দেওয়া হলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, কিংবা স্বাদের তারতম্য ঘটতে পারে। আবার, কোনো কোনো পণ্যকে বিক্রির সুবিধার জন্য কাপড়, কাগজ, টিনের পাত বা কৌটা, পলিথিন, পেপার ইত্যাদি জিনিস দিয়ে আবৃত করা হয়। পণ্যের এ আবরণ মোড়ক নামে পরিচিত। পণ্যের গায়ে মোড়ক লাগানোকেই মোড়কীকরণ বলা হয়। মোড়ক পণ্যকে অধিকতর নিরাপদ কিংবা সহজে বহনযোগ্য করে তোলে। মোড়ক থাকলে পণ্য বহুদিন ধরে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ব্র্যান্ড নামের মতো আকর্ষণীয় মোড়ক পণ্যের প্রতি ক্রেতার মনোভাবকে প্রভাবিত করে। ফলে ক্রেতার ক্রয় সিদ্ধান্তও প্রভাবিত হয়।

৭। লেবেলিং: লেবেলিং হচ্ছে প্যাকেজিং-এর অংশ। এতে পণ্য, বিক্রেতা বা উৎপাদনকারীর বিভিন্ন ধরনের তথ্য থাকে। এটি ছোট চিরকুট থেকে আরম্ভ করে জটিল গ্রাফিক্স পর্যন্ত হতে পারে।

৮। পণ্য সহায়ক সেবা: পণ্য কৌশলের আরেকটি দিক হচ্ছে ক্রেতা সেবা। এ পর্যায়ে পণ্য সমর্থন সেবার মধ্যে সংস্থাপন, বিক্রয়োত্তর সেবা, ওয়ারেন্টি, বাসায় সরবরাহ, কিস্তিতে বা বাকিতে পণ্য বিক্রয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এসব সেবাকে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে সফলতা অর্জন করার জন্য অবশ্যই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটা বিক্রির প্রয়াস চালাতে হবে।


আরও দেখুন: ই-কমার্স ও ইন্টারনেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত- উক্তিটির ব্যাখ্যা কর

আশাকরি “ই-কর্মার্স ব্যবসায়ীকে পণ্য উন্নয়ন ও বিপণনের কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Leave a Comment